বিশ্বের বিস্ময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: ইঞ্জিনিয়ার জসীম উদ্দিন প্রধান

সিনিয়র রিপোর্টার, ঢাকাঃ

বিশ্বের বিস্ময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: ইঞ্জিনিয়ার জসীম উদ্দিন প্রধান
ছবি: সংগৃহীত
ডেস্ক রিপোর্টঃ
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা দিয়ে মহাদেশ গড়ে ওঠে। বিন্দু বিন্দু জলের সমষ্টি সৃষ্টি করে মহাসমুদ্র আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তের সমষ্টিতে তৈরি হয় মহাকাল। কিন্তু এসবের সঙ্গেই মানবজীবন ও মানবসমাজের প্রতিটি বিষয় তুলনীয়। কারণ, বড় কোনো কিছু হঠাৎ করেই বড় হয় না। ক্ষুদ্র যখন সামষ্টিক আকার ধারণ করে, তখনই কেবল তা বৃহৎ হয়ে ওঠে। ঠিক তেমনিভাবে বিশ্বরাজনীতির কবি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা, ত্যাগ-তিতিক্ষার পর দেশের রাজনীতিতে একজন সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেলের দেশ হিসেবে বিশ্বে নেতৃত্বে দিচ্ছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দেশেরই নন, তিনি বিশ্বনেত্রী। তিনি বাঙালি জাতির চেতনার প্রতীক, আমাদের অহংকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ক্ষমতায় থাকা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নারীনেত্রী। উইকিলিকসের সর্বশেষ গবেষণামতে, শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বের পুনরুত্থান করা সবচেয়ে আইকনিক নেত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় ও সর্বমোট চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা নদীর পানিচুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এর মধ্যে দুস্থ মহিলা ও বিধবা-ভাতা, প্রতিবন্ধী-ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা-ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তিনিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে করে বিচারব্যবস্থা পুনর্গঠন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু, রাজনৈতিক হত্যা, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সপরিবার, কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যাসহ সব হত্যার বিচার-কার্যক্রম শুরু করেন।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিরোধী দলে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন ও নেতৃত্বশূন্য করতে বেশ কয়েকবার মারণাঘাত চালায় ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর ২০০৮ সালে ফের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একুশ শতকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন। তারপর বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ১৩ হাজার ২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, পাঁচ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষিদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৩৮.৪ থেকে ২০১৩-১৪ বছরে ২৪.৩ শতাংশে হ্রাস করে।
তারপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থলসীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন (এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান হয়েছে), মাথাপিছু আয় এক হাজার ৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার ২২.৪ শতাংশে হ্রাস, ৩২ বিলিয়ন ডলারের ওপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন কাজ করে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তারপর মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারকাজে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য, কৃষি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুত্তি, বিদ্যুৎ খাত, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন দেশের ভেতর-বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষা খাতে অভাবনীয় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিনামূল্যে বই বিতরণ, মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ, যা জোট সরকারের আমলের ১৩ গুণ বেশি, শিক্ষক নিয়োগ ও মর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড, কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ করছে।
বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও প্রশংসিত। কথিত তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এ ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছেন। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসসহ আরো অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। দেশের আইটি খাতের নতুন সম্ভাবনা যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা তাঁর চতুর্থ মেয়াদও সফলতার সঙ্গে শেষ করবেন, তা হলফ করে বলা যায়। লেখক:
ইঞ্জিনিয়ার জসীম উদ্দিন প্রধান, সাধারণ সম্পাদক জাপান আওয়ামীলীগ।