বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলা দাসের ২য় মৃত্যু বার্ষিকী আজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকাঃ

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলা দাসের ২য় মৃত্যু বার্ষিকী আজ
ছবি: সংগৃহীত

নাসিম আহমেদ রিয়াদঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলা দাসের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার। ২০১৯ সালের ২২ শে জানুয়ারি এই দিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অদম্য সাহসী এই নারী মুক্তিযোদ্ধা। পরদিন গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।


বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলা দাস আজীবন মুজিব আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিক ছিলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর গড়া মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আমৃত্যু এর সক্রিয় নেতা কমী ছিলেন তিনি। 

তার একমাত্র কন্যা সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ও বর্তমান মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভানেত্রী বনশ্রী বিশ্বাস স্মৃতি কনা পরিবারের পক্ষ থেকে শুক্রবার দুপুরে নারিন্দাস্হ মাধ্ব গৌড়ীয় মঠে এক বিশেষ প্রাথনা ওমহা প্রসাদের আয়োজন করে এবং ২৩ শে জানুয়ারি শনিবার তার নিজ গ্রাম যেখানে চির সায়িত সেখানে দিন ব্যাপি গীতা পাঠ, ধমীয় আলোচনা, প্রসাদ আপ্যায়ন শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রীতি সংবধনার আয়োজন করা হবে। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করার জন্য আত্মীয় পরিজন বন্ধু সকলের নিকট অনুরোধ করেছন বনশ্রী বিশ্বাস স্মৃতি কনা।
   
উল্লেখ, রাজধানী ঢাকার সূত্রাপুরে জন্ম সাহসী নারী ইলা দাসের। বাবা হরলাল দাস ও মা নির্মলা দাস। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মী ইলা মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন নারী শিক্ষা মন্দির উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমান শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে। একাত্তরে তিনি ছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী। একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অগ্নিঝরা ভাষণের সময় রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উপস্থিত ছিলেন তিনি। ২৬ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট নামে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু হলে গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে চলে যান তিনি। তবে চুপ থাকার মতো মেয়ে ছিলেন না মোটেই। স্থানীয়ভাবে গঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের অস্ত্র চালানো, গ্রেনেড ছোড়াসহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন দলনেতা গয়েশ আলী মাস্টার। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে পাহাড়িয়া অঞ্চলে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। চারদিকে পাহাড়ঘেরা এবং মাঝখানে কিছুটা সমতল ভ‚মিতে চলতো প্রশিক্ষণ। মহাসড়কের পাশে পাতা কুড়ানির ছদ্মবেশে এক নারী পাহারায় থাকতেন। মহাসড়কে পাকসেনাদের আসার খবর পৌঁছে দিতেন তিনি। ওই সংবাদের ভিত্তিতে পাহাড়ের ঢালে ও গাছের আড়ালে থেকে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অভিযান চালাতেন ইলা দাস ও তার সঙ্গীরা। গ্রেনেড ছুড়ে মারতেন পাকিস্তানিদের ট্যাংক লক্ষ্য করে। মহাসড়কে মাইন পুঁতে রাখতেন।

যুদ্ধের সময় বটতলা গ্রামে একটি বাড়িতে মাঝে মাঝে গিয়ে আশ্রয় নিতেন ইলা দাস। একদিন ওই বাড়িতেই ঘুমিয়েছিলেন। কিন্তু রাতের শেষ দিকে ওই গ্রামে রাজাকার ও পাকসেনাদের অভিযানের খবর আসে। গ্রামের সব বাড়িতে ঢুকে যুবকদের ধরে নিয়ে গিয়ে একটি বাড়িতে রাখে তারা। পাকসেনাদের দেখেই পেছনের দরজা দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে উঁচু একটি পাঁচিল টপকে বাঁশ বাগানে চলে যান তিনি। পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সাঁতার না জানা ইলা দাস ঝাঁপিয়ে পড়েন মধুবিলে। কিন্তু বিলের দিকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে খানসেনারা। বেশ কিছুক্ষণ শ্বাস বন্ধ করে জলের নিচে ডুব দিয়ে থাকায় ঠিকমতো টার্গেট করতে পারেনি পাকিস্তানি সেনারা। পাকিস্তানি সৈন্যদের চলে যাওয়ার পর বিলের অপর পার থেকে মুক্তিযোদ্ধারা উদ্ধার করে তাকে।

আমাদের দেশকাল/আল-নাহিয়ান/ইউসুফ