রক্তাক্ত বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস এই ১৫ই আগস্ট: আব্দুর রহমান

রক্তাক্ত বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস এই ১৫ই আগস্ট: আব্দুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, বেদনাবিধুর রক্তাক্ত বিশ্বাসঘাতকতার ইসিহাস এই ১৫ই আগস্ট। তিনি বলেন, এই খবর শুনবার পরে কত না ব্যাকুলতা, চোখে-মুখে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, কত না স্বপ্ন দেখা এই বুঝি কোথাও থেকে কোন ডাক আসবে। এই বুঝি পিতা হত্যার বদলা নেবার প্রতিরোধ মছিলে হাজির হব। কিন্তু সেদিন দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই সুসংগঠিত কোন আহবান বা কোন ডাক সেদিন আমরা পাইনি। মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব এবং ১৫ আগস্টের শহিদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের বাৎসরিক প্রকাশনা ‘জন্মভূমি’ এবং ‘জয় বাংলা- ম্যাগাজিনের (২য় সংস্করণ) মোড়ক উন্মোচন করেন।
১৫ আগস্টের স্মৃতি চারণ করে আব্দুর রহমান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫  আগস্ট ৩২ নম্বর বাড়িতে, বাড়ির সিড়ি দিয়ে সেই দীর্ঘদেহী আমাদের পিতার লাশ পড়ে ছিল। সেদিন ব্যক্তিগত ভাবে আমি সেদিন একটি সরকারি কলেজের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এই খবর শুনবার পরে কত না ব্যাকুলতা, চোখে-মুখে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা, কত না স্বপ্ন দেখা এই বুঝি কোথাও থেকে কোন ডাক আসবে। এই বুঝি পিতা হত্যার বদলা নেবার প্রতিরোধ মছিলে হাজির হব। কিন্তু সেদিন দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই সুসংগঠিত কোন আহবান বা কোন ডাক সেদিন আমরা পাইনি।  কিন্তু তারপরেও অনেকে বলবার চেষ্টা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয় নাই, প্রতিরোধ হয় নাই এই কথার সঙ্গে আমি অবশ্যই একমত না। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধের জন্য সেদিন প্রতিরোধ হয়েছিল, সেদিন বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে যে যেমন পারে তেমন ছুটে, সেদিন পিতা হত্যার বদলা নেবার জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল। তিনি বলেন, সেদিন আমরা কিছু ছেলেরা সীমান্ত পাড় হয়ে ওপারে গিয়েছিলাম। ১৮ দিন পরে গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার এসে আমাদেরকে বলেছিল যে, তোমাদের অনেক জাতীয় নেতা অনুপ্রবেশ করবে আসবে সীমান্ত পাড় হয়ে সেটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু সেই প্রিত্যাশা পূরণ হয় নাই, সেই ব্যার্থতার দায়ভার আমাদেরকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সেদিন আমাদের অনেক দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ছিল, কিন্তু সেই নেতৃত্ব সেদিন তাদের সেই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে ব্যার্থ হয়েছে একথা অবশ্যই বলতে চাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার সকল ক্ষেত্র যখন সম্পন্ন হয়েছিল তখন ওরা আঘাত করল এবং সেই বঙ্গবন্ধুকে আমরা সপরিবারে হারালাম।
আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ফখরুল ইসলাম সাহেব বলেছেন- জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল এর প্রমাণ কি?  এর প্রমান দেন। যথেষ্ট প্রমাণ কি নয়, যেই আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে আমরা শোকে কাতর হয়ে পড়ি যেই ১৫ আগস্টে আমাদের সব হারানোর বেদনা নিয়ে আমরা বুক চাপড়াই সেদিন আপনারা কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন। এই দুই-আড়াই বছরেরও বেশি কাল ধরে ছাত্রদলের কোন কার্যক্রম আমি দেখি নাই, কিন্তু এই আগস্ট মাস আসলে তারা একটা নতুন কমিটি করে ঐ চন্দিমা উদ্যানে জিয়ার মাঝারে ফুল দেয়ার নামে বাস ভাঙচুর,  যানবাহন ভাঙচুর করে একটা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করার পায়তারা করেছিল। এবং এখনও তারা সেই পায়তারা করছে। আগস্ট মাস আসলেই ওরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, আমরাও ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। কিন্তু প্রিয় নেত্রী, প্রিয় আপা আপনাকে বলতে চাই এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কে বড় ভালবাসেন, আপনার নিজেরসন্তান তুল্য করে জানেন, আপনার ছোট ভাইয়ের মত করে আদর করেন। এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে, কিন্তু আপনার স্বস্তির জায়গা সেখানে এই করোনাকালীন সময়ে ছেলে বাবার লাশ দেখে নাই, কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ছেলেরা সেই লাশ দাফন করেছে, তাদের সৎকার করেছে, কৃষকের ধান ক্ষেত থেকে কেটে তাদের গোলায় তুলে দিয়েছে। এবং আপনি যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন মিথ্যা মামলায়, সি সময়েও এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সেদিন আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রণী ভূমিকায় ছিল। তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি বলতে চাই আজকের এই শোকের দিনে এই আলোচনা সভায় দাঁড়িয়ে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভাই এবং বোনেরা তোমাদের কাছে উদাত্ত আহবান জানাতে চাই, আজ আমাদের নেত্রী তিনি দুঃখের সাগরে ভাসতে ভাসতে ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে আমাদের মাঝে এসেছিলেন। আর তিনি এসেই বাংলার মানুষকে বলেছিলেন আমার অবস্থা যদি আমার পিতার মতও হয়, আমার বাবার মত জীবন দিতে হয় আমি দেব, তবু আমি বাবার স্বপ্ন পূরণ করব। আর সেই থেকেই এই ছাত্রলীগকে নিজের আঁচলের ছায়ায় ঢেকে রেখে লালন পালন করেছে আর আমার আপনার সেই নেত্রী কোন ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়, কোন ষড়যন্ত্রের গন্ধ আমরা পাই ছাত্রলীগের একটা নেতা কর্মী আমাদের জীবন আমরা রাখতে চাইনা, আমরা বেচে থাকতে চাইনা, আমরা কোন অবস্থাতেই সেই ষড়যন্ত্র বাংলার মাটিতে আমরা বাস্তবায়িত হতে দিতে পারি না। তাই আপনাদের সমস্ত জায়গায় সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে, মনে রাখতে হবে ষড়যন্ত্র ছিল, এখনও আছে। আগস্ট মাসে শোকের দিনে দাঁড়িয়ে মানবিক শক্তি অর্জন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ শেখ হাসিনা নেতৃত্ব গড়ব, এটাই হোক আজকে আমাদের প্রত্যয়, আজকের শপথ।
---